To know Bangladesh, people, culture and paradox in the light of what we know through Delight Express/ মু্ক্তিযুদ্ধের জাগরণের গান, রাজহাঁসের জন্য শোকগাঁথা, ভালোবাসি অগ্রানের বাংলাদেশ, ময়ের পেটে গুলি খেলো যে শিশুটি, পদ্য কথা আবৃত্তি, হরিনের মায়েদের গল্প, হাজার বছর ধরে,7th March, 1971 Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman

Friday, February 24, 2017

হরিনের মায়েদের গল্প - মশিউর রহমান মিঠু

প্রাণী দেখে অবাক হওয়াই তাদের স্বভাব। কখনও নতুন প্রাণী দেখে এমন-ই অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে যে  ক্ষিধার কথাও তারা ভূলে যায়। ঐ জীবটিযে তাকে আক্রমন করতে পারে, কেড়ে নিতে পারে মহামূল্যবান প্রাণ তাও তাদের মনে থাকেনা। অথচ আজন্ম একটি ভয় তাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। মা বলেন,  “দেখপ্রাণী দেখে অবাক হওয়াই তাদের স্বভাব। কখনও নতুন প্রাণী দেখে এমন-ই অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে যে  ক্ষিধার কথাও তারা ভূলে যায়। ঐ জীবটিযে তাকে আক্রমন করতে পারে, কেড়ে নিতে পারে মহামূল্যবান প্রাণ তাও তাদের মনে থাকেনা। অথচ আজন্ম একটি ভয় তাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। মা বলেন,  “দেখ বাচ্ছারা, আমরা দেখতে খুবই সুন্দর, কিন্তু আমরা খুবই নিরীহ। প্রকৃতি আমাদের সৃষ্টি করেছে কোন জীবিত বা মৃত প্রাণীর ক্ষতি না করে সৌন্দর্য ও কৌতুহলী স্বভার নিয়ে বাচার জন্য। আমাদের  শত্রুকে প্রতিহত করার কোন অস্ত্র নেই। আবার কাউকে আক্রমন করা আমাদের স্বভাবে নেই। আমাদের অনেক শত্রু আছে। তাই আমাদের সর্বক্ষন সতর্ক থাকতে হয়। রাতে শোয়ার সময়ও আমরা একে অন্যকে পাহারা দিয়ে থাকি, যাতে শত্রু এলে আমরা দেখতে পাই এবং ক্ষীপ্র গতিতে ছুটে পালাতে পারি। আমাদের ছোটার গতিও খুব ক্ষীপ্র, তাই বেশির ভাগ সময়ে শত্রু আমাদের নাগাল পায়না।মার কাছ থেকে এসব শোনার পর থেকে সে গোত্রের অন্যদের মত  ভীত ও সতর্ক থাকে। মাঝে মাঝে নিজের শরীরে নিজের পা লাগলেও আতঙ্কে লাফিয়ে ওঠে।

সেদিন সে খেলেছিল একটি কাঠ বিড়ালী ও দুটো সজারুর সাথে। সারাটা বিকেল লেকের ধারে দাঁড়িয়ে জেলেদের মাছ ধরা দেখেছিল। কালো কুচকুচে শরীরের জেলেটিকে সে আগেও দেখেছিল, জেলেটির সাথে আরো একজন ছেলে মতন মানুষ আছে, ছেলেটি রাখার পাত্র নিয়ে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে, আর কালো লোকটি অনেক মাছ ধরছে আর  ছেলেটিকে বকাঝকা করছে। তার এসব ভালো লাগে।

রাতে সে শুয়ে ছিলো মায়ের পাশে। চাঁদ ওঠেছিল সন্ধ্যার পর থেকে; তারপর ডুবে গেল রাত প্রথম প্রহরে। চাঁদের ডুবে যাবার পর চারদিকে বিচিত্র সব ধ্বনি ওঠে। সে সব ধ্বনি  শুনে প্রথম প্রথম আতঙ্কে তার শরীর হিম হয়ে যেত- শেয়ালের ডাক, বাঘডাসের ডাক, বাজ পাখির ডাক, সমস্বরে নানা প্রাণীদের কত বিচিত্র ধ্বনি। ধীরে ধীরে এক সময় তা সয়ে গেছে। এসব ধ্বনি থেকে গেলে সে ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ কিছু বিচিত্র শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ মেলে সে দেখে সার্চ লাইটের তীব্র ঝাঁঝালো আলো তার চোখ অন্ধকরে দিচ্ছে। ধড়ফড় করে সকলে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। তারপর দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে থাকে। কিন্তু কিছু দূরে গিয়ে সে দলের অন্যাদের  মতো আটকা পড়ে জালের মধ্যে। সেখানে জালের মধ্যে আটকা পড়া অবস্থায় উল্টোভাবে শিং আটকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পাঁচজন মারা যায়। এর মধ্যে একজন ছিলো তারা বাবা। বাবা ছিলো তার বন্ধুর মতো। খুর ছোট বেলায় দেখেছে বাবা তার মায়ের কাছাকাছি থাকতো আর তাদের পাহারা দিয়ে রাখতো। বাবার শিংগুলো ছিলো সুন্দর শাখা প্রশাখায় বিন্যস্ত আর মসৃন। সহজেই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করা যেতো। ওরা ধীরে ধীরে বড় হবার পর বাবা মার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। তখন থেকে বাবার অন্য একজন সঙ্গী ছিলো। তবু বাবা মাঝে মাঝে তাদের কাছে এসে আদর করে দিয়ে যেতো। মা কোন দিন বলেনি যে ও তাদের বাবা। তবু ও তারা ধরে নিয়েছিলো ঠিকই। চার্জ লাইটের তীব্র আলোয় সে দেখতে পায় তার বাবা সুন্দর শাখা প্রশাখাওয়ালা শিং জালের ভিতর আটকে উল্টে মরে পড়ে আছে। তারা কি করে জানবে ব্ুিদ্ধমান ঘাতকরা তাদের ধরার জন্য জাল দিয়ে ফাঁদ পেতেছে।
যারা বেঁচে ছিলো তাদের নির্মমভাবে খাঁচায় ভরে গাড়িতে তোলা হয়। চিত্রা হরিণ দল জানবে কিভাবে যে, তাদের রাতের অন্ধকারে বিমান বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তাদের একটি অন্ধকার ঘরে রাখা হয়। তাদের দিনের আলোতে বের করা হয় না। পরে  তাদের বিমানে তোলা হয়। অবোধ চিত্রা হরিণ জানতো না তারা পৃথিবীর বিরল প্রজাতির প্রাণী। তাদের রক্ষার জন্য পৃথিবীর কিছু সভ্য মানুষের প্রচেষ্টায় আইন তৈরী হয়েছে। এ আইনের ভয়ে নির্মম মানুষগুলো তাদের বিমান থেকে নামিয়ে ফেলে। সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি থিম পার্ক নামের চিড়িয়াখানায়। কিন্তু তারা তাদের নিজস্ব পরিবেশ ফিরে পায় না। তাদের বিধ্বস্ত মন স্বাভাবিক হয় না ; সে লক্ষ্য  করে ; তার মা কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। শুধু বেঁচে থাকার মতো অল্পকিছু খাবার খায়। বাকী সময় স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে।
এর কিছু দিন পর তাদের আবার ধরে অন্য আরেকটি খাঁচায় পুরা হয়। সেখানে দুটি চিত্রা হরিণ মারা যায়। এর একটি ছিল তার মা। মার নিথর শরীরের দিকে সে তাকাতে পারে না, এতটি বছর আগলে রেখেছে তাদের পরম আদরে এ অরণ্য জীবনে মা ছাড়া তাদের কোন আত্মীয় ছিলো না। তাদের জঙ্গল জীরনে মা-ই  সব। মার মৃত্যূ কি বুদ্ধিমান প্রানীদের নিমর্মতার বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ ছিল? না হলে এত সহজে কেন মরে গেল কেন মা?
তার চোখের সামনে করিৎকর্মা লোকগুলোর সেদিকে ভূক্ষেপ করার সময় নেই।  তারা গোপনে খাঁচাগুলো তুলে দেয় বিমানে। আবার করিৎকর্মা উপদেষ্টাদের কেউ কেউ দুচারটি হরিণ তুলে নেয় তাদের বিলাসবহুল বাগান বাড়ির জন্য। সে বিমানে দেশের  মন্ত্রিগণ গেলেন  একটি মরুময় দেশে সরকারী সফরে। তাঁরা সাথে করে নিয়ে যাচ্ছেন ধনাঢ্য দেশটির শাসকদের খুশি করার জন্য দশটি চিত্রা হরিণ। দেশের জ্ঞানী (!) উপদেষ্টার অভাব নেই, যারা এমন অভিনব উপহারের আইডিয়া দিয়ে থাকেন। তারা পরামর্শ দিয়েছেন অভিনব উপহার সে দেশের আমির খুশি হয়ে আমাদের জন্য শনৈঃ শনৈঃ সাহায্য দিবেন। কিন্তু সাহায্য কিছু আসেনি। অবোধ চিত্রা হরিণগুলো উপহারের বলি হয়েছে।
তাদের রাখা হয়েছে মরুময় একটি বাড়ির চিড়িয়াখানায়। দিনে তীব্র তাপদাহ আর রাতের তীব্র শীতে তাদের প্রাণশক্তি নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথিতি হিসেবে তাদের সেদেশের মানুষ খাচাবন্দি করে প্রচুর আদর আপ্যায়ন করছে। মন্ত্রিমহাজ্ঞানী উপদেষ্টাদের পরামর্শে আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে বিরল প্রজাতির হরিণ ছানাদের বলি দেবার জন্য সাথে করে নিয়ে গেলেন। মানুষ যে বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য আইন তৈরী করেছেন পরম মমতায় ; তা হরিণেরা জানলো না। তারা শুধু দেখলো দুপা ওয়ালা বুদ্ধিমান জীবগুলোর নির্মমতার পাশবিক চি ত্র। বন্য জীবদের অভিজ্ঞতা জন্মজন্মান্তরে সঞ্চালিত হয়। অবোধ চিত্রা হরিণ ধীরে ধীরে মরা যাচ্ছে। যদি সে কোনভাবে তাদের বনের অন্যহরিণগুলোকে দুপা-ওয়ালা জীবগুলোর নির্মম অভিজ্ঞতার গল্প শুনাতে পারতো! জানে সে তা পারবে না। দ্রুত সে নি:শেষ যাচ্ছে। তবে তাদের দলের যে দুএকটি হরিন জালের ফাঁদ থেকে বাচতে পেরেছিলে,তারা নিশ্চিতভাবে আগামী প্রজন্মের চিত্রা হরিণগুলোর হিংস্র জন্তুর তালিকায় দু-পেয়ে বুদ্ধিমান প্রানীটিকে অন্তভূক্ত করবে । তারা  তাদের পরবর্তী প্রজন্মের হরিণ সাবকদের কাছে গল্প করবে যে, শোন বাচ্ছারা, আমাদের জন্য বিপদজ্জনক জীব হলো- বাঘ, সিংহ, চিতা, হায়েনা। কিন্তু আরো বিপদজনক হলো মানুষ নামের দুই পা ওয়ালা একটি জীব। কেন না তারা জঙ্গলের আইন মানে না। বাচ্ছারা, আমরা দেখতে খুবই সুন্দর, কিন্তু আমরা খুবই নিরীহ। প্রকৃতি আমাদের সৃষ্টি করেছে কোন জীবিত বা মৃত প্রাণীর ক্ষতি না করে সৌন্দর্য ও কৌতুহলী স্বভার নিয়ে বাচার জন্য। আমাদের  শত্রুকে প্রতিহত করার কোন অস্ত্র নেই। আবার কাউকে আক্রমন করা আমাদের স্বভাবে নেই। আমাদের অনেক শত্রু আছে। তাই আমাদের সর্বক্ষন সতর্ক থাকতে হয়। রাতে শোয়ার সময়ও আমরা একে অন্যকে পাহারা দিয়ে থাকি, যাতে শত্রু এলে আমরা দেখতে পাই এবং ক্ষীপ্র গতিতে ছুটে পালাতে পারি। আমাদের ছোটার গতিও খুব ক্ষীপ্র, তাই বেশির ভাগ সময়ে শত্রু আমাদের নাগাল পায়না।মার কাছ থেকে এসব শোনার পর থেকে সে গোত্রের অন্যদের মত  ভীত ও সতর্ক থাকে। মাঝে মাঝে নিজের শরীরে নিজের পা লাগলেও আতঙ্কে লাফিয়ে ওঠে।

সেদিন সে খেলেছিল একটি কাঠ বিড়ালী ও দুটো সজারুর সাথে। সারাটা বিকেল লেকের ধারে দাঁড়িয়ে জেলেদের মাছ ধরা দেখেছিল। কালো কুচকুচে শরীরের জেলেটিকে সে আগেও দেখেছিল, জেলেটির সাথে আরো একজন ছেলে মতন মানুষ আছে, ছেলেটি রাখার পাত্র নিয়ে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে, আর কালো লোকটি অনেক মাছ ধরছে আর  ছেলেটিকে বকাঝকা করছে। তার এসব ভালো লাগে।

রাতে সে শুয়ে ছিলো মায়ের পাশে। চাঁদ ওঠেছিল সন্ধ্যার পর থেকে; তারপর ডুবে গেল রাত প্রথম প্রহরে। চাঁদের ডুবে যাবার পর চারদিকে বিচিত্র সব ধ্বনি ওঠে। সে সব ধ্বনি  শুনে প্রথম প্রথম আতঙ্কে তার শরীর হিম হয়ে যেত- শেয়ালের ডাক, বাঘডাসের ডাক, বাজ পাখির ডাক, সমস্বরে নানা প্রাণীদের কত বিচিত্র ধ্বনি। ধীরে ধীরে এক সময় তা সয়ে গেছে। এসব ধ্বনি থেকে গেলে সে ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ কিছু বিচিত্র শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ মেলে সে দেখে সার্চ লাইটের তীব্র ঝাঁঝালো আলো তার চোখ অন্ধকরে দিচ্ছে। ধড়ফড় করে সকলে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। তারপর দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে থাকে। কিন্তু কিছু দূরে গিয়ে সে দলের অন্যাদের  মতো আটকা পড়ে জালের মধ্যে। সেখানে জালের মধ্যে আটকা পড়া অবস্থায় উল্টোভাবে শিং আটকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পাঁচজন মারা যায়। এর মধ্যে একজন ছিলো তারা বাবা। বাবা ছিলো তার বন্ধুর মতো। খুর ছোট বেলায় দেখেছে বাবা তার মায়ের কাছাকাছি থাকতো আর তাদের পাহারা দিয়ে রাখতো। বাবার শিংগুলো ছিলো সুন্দর শাখা প্রশাখায় বিন্যস্ত আর মসৃন। সহজেই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করা যেতো। ওরা ধীরে ধীরে বড় হবার পর বাবা মার কাছ থেকে দূরে সরে যায়। তখন থেকে বাবার অন্য একজন সঙ্গী ছিলো। তবু বাবা মাঝে মাঝে তাদের কাছে এসে আদর করে দিয়ে যেতো। মা কোন দিন বলেনি যে ও তাদের বাবা। তবু ও তারা ধরে নিয়েছিলো ঠিকই। চার্জ লাইটের তীব্র আলোয় সে দেখতে পায় তার বাবা সুন্দর শাখা প্রশাখাওয়ালা শিং জালের ভিতর আটকে উল্টে মরে পড়ে আছে। তারা কি করে জানবে ব্ুিদ্ধমান ঘাতকরা তাদের ধরার জন্য জাল দিয়ে ফাঁদ পেতেছে।
যারা বেঁচে ছিলো তাদের নির্মমভাবে খাঁচায় ভরে গাড়িতে তোলা হয়। চিত্রা হরিণ দল জানবে কিভাবে যে, তাদের রাতের অন্ধকারে বিমান বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তাদের একটি অন্ধকার ঘরে রাখা হয়। তাদের দিনের আলোতে বের করা হয় না। পরে  তাদের বিমানে তোলা হয়। অবোধ চিত্রা হরিণ জানতো না তারা পৃথিবীর বিরল প্রজাতির প্রাণী। তাদের রক্ষার জন্য পৃথিবীর কিছু সভ্য মানুষের প্রচেষ্টায় আইন তৈরী হয়েছে। এ আইনের ভয়ে নির্মম মানুষগুলো তাদের বিমান থেকে নামিয়ে ফেলে। সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি থিম পার্ক নামের চিড়িয়াখানায়। কিন্তু তারা তাদের নিজস্ব পরিবেশ ফিরে পায় না। তাদের বিধ্বস্ত মন স্বাভাবিক হয় না ; সে লক্ষ্য  করে ; তার মা কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। শুধু বেঁচে থাকার মতো অল্পকিছু খাবার খায়। বাকী সময় স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে।
এর কিছু দিন পর তাদের আবার ধরে অন্য আরেকটি খাঁচায় পুরা হয়। সেখানে দুটি চিত্রা হরিণ মারা যায়। এর একটি ছিল তার মা। মার নিথর শরীরের দিকে সে তাকাতে পারে না, এতটি বছর আগলে রেখেছে তাদের পরম আদরে এ অরণ্য জীবনে মা ছাড়া তাদের কোন আত্মীয় ছিলো না। তাদের জঙ্গল জীরনে মা-ই  সব। মার মৃত্যূ কি বুদ্ধিমান প্রানীদের নিমর্মতার বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ ছিল? না হলে এত সহজে কেন মরে গেল কেন মা?
তার চোখের সামনে করিৎকর্মা লোকগুলোর সেদিকে ভূক্ষেপ করার সময় নেই।  তারা গোপনে খাঁচাগুলো তুলে দেয় বিমানে। আবার করিৎকর্মা উপদেষ্টাদের কেউ কেউ দুচারটি হরিণ তুলে নেয় তাদের বিলাসবহুল বাগান বাড়ির জন্য। সে বিমানে দেশের  মন্ত্রিগণ গেলেন  একটি মরুময় দেশে সরকারী সফরে। তাঁরা সাথে করে নিয়ে যাচ্ছেন ধনাঢ্য দেশটির শাসকদের খুশি করার জন্য দশটি চিত্রা হরিণ। দেশের জ্ঞানী (!) উপদেষ্টার অভাব নেই, যারা এমন অভিনব উপহারের আইডিয়া দিয়ে থাকেন। তারা পরামর্শ দিয়েছেন অভিনব উপহার সে দেশের আমির খুশি হয়ে আমাদের জন্য শনৈঃ শনৈঃ সাহায্য দিবেন। কিন্তু সাহায্য কিছু আসেনি। অবোধ চিত্রা হরিণগুলো উপহারের বলি হয়েছে।

তাদের রাখা হয়েছে মরুময় একটি বাড়ির চিড়িয়াখানায়। দিনে তীব্র তাপদাহ আর রাতের তীব্র শীতে তাদের প্রাণশক্তি নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথিতি হিসেবে তাদের সেদেশের মানুষ খাচাবন্দি করে প্রচুর আদর আপ্যায়ন করছে। মন্ত্রিমহাজ্ঞানী উপদেষ্টাদের পরামর্শে আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে বিরল প্রজাতির হরিণ ছানাদের বলি দেবার জন্য সাথে করে নিয়ে গেলেন। মানুষ যে বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য আইন তৈরী করেছেন পরম মমতায় ; তা হরিণেরা জানলো না। তারা শুধু দেখলো দুপা ওয়ালা বুদ্ধিমান জীবগুলোর নির্মমতার পাশবিক চি ত্র। বন্য জীবদের অভিজ্ঞতা জন্মজন্মান্তরে সঞ্চালিত হয়। অবোধ চিত্রা হরিণ ধীরে ধীরে মরা যাচ্ছে। যদি সে কোনভাবে তাদের বনের অন্যহরিণগুলোকে দুপা-ওয়ালা জীবগুলোর নির্মম অভিজ্ঞতার গল্প শুনাতে পারতো! জানে সে তা পারবে না। দ্রুত সে নি:শেষ যাচ্ছে। তবে তাদের দলের যে দুএকটি হরিন জালের ফাঁদ থেকে বাচতে পেরেছিলে,তারা নিশ্চিতভাবে আগামী প্রজন্মের চিত্রা হরিণগুলোর হিংস্র জন্তুর তালিকায় দু-পেয়ে বুদ্ধিমান প্রানীটিকে অন্তভূক্ত করবে । তারা  তাদের পরবর্তী প্রজন্মের হরিণ সাবকদের কাছে গল্প করবে যে, শোন বাচ্ছারা, আমাদের জন্য বিপদজ্জনক জীব হলো- বাঘ, সিংহ, চিতা, হায়েনা। কিন্তু আরো বিপদজনক হলো মানুষ নামের দুই পা ওয়ালা একটি জীব। কেন না তারা জঙ্গলের আইন মানে না।

No comments:

Post a Comment

Thank you very much for visit the site